মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১২:৪৩ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্র দায়হীন থাকতে পারে না

যুক্তরাষ্ট্র দায়হীন থাকতে পারে না

অপরিশোধিত বর্জ্য অনুন্নত দেশগুলোতে চালান করে দিচ্ছে ধনী দেশগুলো। এগুলো নিজ দেশে পরিশোধন করে পরিবেশবান্ধব করে পরিত্যক্ত করার বদলে তারা কাজটি করছে। এতে করে ওই সব দরিদ্র দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিত্যক্ত বর্জ্যগুলো আফ্রিকা ও এশিয়ায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে এরা বিশ্ব স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
গ্লোবাল গার্বেজ ট্রেন্ডের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৪টি দেশ সম্মিলিতভাবে প্রতি বছর সারা বিশ্বে দুই দশমিক এক বিলিয়ন টন আবর্জনা উৎপন্ন করে, যা দিয়ে অলিম্পিক সাইজের সোয়া আট লাখ সুইমিংপুল ভর্তি করা যায়। এসব আবর্জনার মাত্র ১৬ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করা হয়। বাকি ৮৪ শতাংশ যেভাবে ধ্বংসের চেষ্টা করা হয় সেটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বর্জ্য উৎপাদনের দিক দিয়ে মার্কিনিরা সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তারা বছরে গড়ে যে বর্জ্য উৎপাদন করে, তা বিশ্বের মোট বর্জ্যরে ১২ শতাংশ। মোট ২৩ কোটি ৯০ লাখ টন বর্জ্য এরা উৎপাদন করে। এটি বিশ্বব্যাপী গড় বর্জ্য উৎপাদনের তিন গুণের বেশি। সবচেয়ে বেশি বর্জ্য উৎপাদনকারী হলেও তাদের বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করার হার খুব কম। ক্ষতিকর এসব বর্জ্যরে লক্ষ্যস্থল আফ্রিকা ও এশিয়া। বর্জ্য আমদানিকারক দেশ চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া ইতোমধ্যে নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে এর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশে শ্রমের মূল্য সস্তা হওয়ায় মার্কিন বর্জের লক্ষ্য এসব দেশে হয়ে থাকে। এসব দেশের অনেকে ইতোমধ্যে সচেতন হয়ে গেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো পাঁচ কনটেইনার বর্জ্য ফেরত পাঠিয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। দেশটির কর্মকর্তারা শক্ত ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেÑ তাদের দেশকে ‘ময়লার ভাগাড়’ বানানোর সুযোগ দেয়া হবে না। দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেশির ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানি করত চীন। সম্প্রতি পরিবেশ রক্ষার জন্য তারা প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানি করা বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর এশিয়ার অন্যান্য দেশে এ বর্জ্য পাঠানো শুরু হয়। প্লাস্টিক বর্জ্য রীতিমতো ভয়ের সৃষ্টি করছে। সাগর- মহাসাগর এ বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এর ফলে মহাসাগরের বিপুল আয়তনের পানিতে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মারা যাচ্ছে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। সাগরতলার উদ্ভিদও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাছ এবং বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে পাওয়া যাচ্ছে পলিথিন। এই ভয়াবহতা থেকে রক্ষার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেসব প্লাস্টিক বর্জ্য রফতানি করে সেগুলো সবচেয়ে ক্ষতিকর হলেও এ ব্যাপারেও তারা নিরুদ্বেগ।
বর্জ্য দিয়ে পৃথিবীকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উৎপাদিত বর্জ্য দরিদ্র দেশগুলোতে পাঠিয়ে তারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। ইউরোপ তাদের বর্জ্যরে বেশির ভাগ অংশ প্রক্রিয়াজাত করে। ইউরোপের সবচেয়ে কম বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকারী দেশ হলো জার্মানি। তারা তাদের সৃষ্ট বর্জ্যরে ৬৮ শতাংশ প্রক্রিয়জাত করে থাকে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের উৎপাদিত বর্জ্যরে খুব সামান্য অংশ প্রক্রিয়াজাত করে থাকে। বেশির ভাগ বর্জ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে বিশ্বপরিবেশের ক্ষতি করছে। এই দেশ একইভাবে বিশ্ব উষ্ণায়নে বড় ভূমিকা রাখছে। কিন্তু উষ্ণতা কমাতে তারা দায়দায়িত্বহীন থাকছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা বিশ্ব উষ্ণতা হ্রাস চুক্তি থেকে সরে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই নিজেদের উদ্যোগে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। দেশটি এ ব্যাপারে কোনোভাবে দায়দায়িত্বহীন থাকতে পারে না। একইভাবে এ ব্যাপার বাকি বিশ্বকে সাবধান হতে হবে। প্লাস্টিকসহ অন্যান্য যতসব বর্জ্য রয়েছে সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে পরিবেশবান্ধব করতে হবে। অন্যথায় বিশ্বপরিবেশ দ্রুত অবনতির দিকে যাবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877